কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম প্রধান উপায় হলো শ্বাসনালী থেকে বেরিয়ে আসা ক্ষুদ্র জলকণা (ড্রপলেট), যা মানুষ কথা বলা, গান গাওয়া, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার সময় বেরিয়ে আসে। যদিও গবেষণা চলমান রয়েছে, তবে আমরা এখন জানি যে, ভাইরাস এমন মানুষের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে যাদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। এর অর্থ হচ্ছে, কিছু মানুষ সংক্রমিত হতে পারে, এমনকি কোনো ধরনের উপলব্ধি ছাড়াই।
এটি কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেশি – এমন স্থানগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অন্যতম কারণ। তবে জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে অন্যদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা সবসময় সম্ভব নয়, যে কারণে এই ধরনের পরিস্থিতিতে সবাইকে সুরক্ষিত থাকার জন্য কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
তবে মনে রাখবেন, কেবল একটি মাস্ক কোভিড-১৯ এর বিস্তারকে আটকাবে না – আমাদের সবাইকেই শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়ার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। একসঙ্গে এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আমরা কোভিড-১৯ কে পরাহত করতে পারি।
নন-মেডিকেল মাস্ক (কাপড়ের মাস্ক): আপনি এবং আপনার পরিবার যদি এমন কোনো জায়গায় বাস করেন যেখানে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেশি এবং যদি কোভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গ না থাকে, সেক্ষেত্রে নন-মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়।
মেডিকেল মাস্ক: মহামারিজনিত কারণে বিশ্বব্যাপী মেডিকেল মাস্কের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। যদি আপনি বা পরিবারের কোনো সদস্য কোভিড-১৯ এর কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন (৬০ বছরের বেশি বয়সী বা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত) কিংবা আপনি যদি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কারো পরিচর্যায় নিয়োজিত থাকেন, তবে সেক্ষেত্র মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। আপনার যদি কোভিড-১৯ এর উপসর্গ থাকে তবে অন্যদের সুরক্ষার জন্য মেডিকেল মাস্ক পরা উচিত।
কাপড়ের মাস্ক বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয় এবং এগুলো চাইলে আপনি ঘরে বানাতে পারেন বা দোকান থেকে কিনতে পারেন। যদিও কাপড়ের মাস্কের ব্যবহার নিয়ে গবেষণা চলমান রয়েছে, তবে এগুলোর কার্যকারিতা নির্ভর করে এতে ব্যবহৃত কাপড়ের ধরন এবং কয় স্তরের কাপড় ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তিন স্তরের মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয় যেখানে:
আপনি মুখ ঢেকে রাখার জন্য যে ধরনের মাস্কই বেছে নেন না কেন, এটা এমন হতে হবে যাতে নাক, মুখ ও চিুবক ঢেকে রাখা যায় এবং রাবারের বন্ধনী বা গিট দিয়ে সুরক্ষিত থাকে।
আপনি যেখানে থাকেন সেখানে আপনার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট কোনো পরিস্থিতিতে মাস্ক পরতে বলছে কিনা এবং বয়স-ভিত্তিক কোনো পরামর্শ দিয়েছে কিনা সে সম্পর্কে জানুন।
আপনার শিশুর মাস্ক পরা উচিত কিনা তা নির্ভর করে তাদের বয়স এবং নিরাপদে ও যথাযথভাবে মাস্ক ব্যবহার করার ক্ষমতাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ের ওপর। আরও তথ্যের জন্য ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা দেখুন।
যদি আপনার এলাকায় কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়, তবে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন – এমন জনাকীর্ণ পরিস্থিতিতে সবসময় কাপড়ের মাস্ক পরা উচিত। জনাকীর্ণ স্থান এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকা আবদ্ধ জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে যাওয়া যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে।
মাস্কের ব্যবহার এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কে প্রচুর ভুল তথ্য প্রচার হচ্ছে, সুতরাং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আপনার জাতীয় এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতো বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
কখন আপনার মাস্ক পরা উচিত নয়?
নবজাতক ও ছোট শিশু বা শ্বাসকষ্ট রয়েছে এমন যেকোনো মানুষসহ যারা অন্যের সহায়তা ছাড়া মাস্ক খুলতে অক্ষম তাদের কারোরই মাস্ক পরা উচিত নয়।
ইউনিসেফ এবং ডব্লিউএইচওর পরামর্শ হচ্ছে, ৫ বছরে বা তার কম বয়সের শিশুদের মাস্ক পরার দরকার নেই। এটি শিশু সুরক্ষার উপর নির্ভর করে এবং এটা স্বীকৃত যে, শিশুরা বিভিন্ন বয়সে বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকে।
কিছু দেশে শিশুদের মাস্ক ব্যবহার সম্পর্কে ভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, তাই আপনার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বয়স-ভিত্তিক কোনো নির্দেশনা দিয়েছে কিনা তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। যদি তারা ৫ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সী শিশুদের মাস্ক পরানোর নির্দেশনা দেয়, তবে মাস্কের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য শিশুকে আপনার বা অন্য কোনো সেবাদানকারীর চোখের সামনে রেখে সরাসরি তত্ত্বাবধান করা উচিত।
আপনার বা পরিবারের কোনও সদস্যের যদি কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকে বা এমন কোনো অক্ষমতা থাকে যার কারণে মাস্ক ব্যবহার করা কঠিন হয়ে ওঠে, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য কী করা সবচেয়ে ভালো হবে সে বিষয়ে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শরীরচর্চার সময় এমন স্থান বাছাই করুন যেখানে মাস্ক পরার প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে ঘর বা এমন কোনো স্থান (যেমন বাইরে কোথাও) বাছাই করতে পারেন যেখানে আপনি অন্যদের থেকে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারেন। শিশু এবং বয়স্কদের খেলাধুলা বা শারীরিক কার্যকলাপের সময় মাস্ক পরা উচিত নয়, যাতে এটি তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি করতে না পারে। ঘাম মাস্ককে ভিজিয়ে ফেলতে পারে, যা নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা তৈরি করবে এবং জীবাণুর বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
আমার শিশুদের জন্য মাস্ক বাছাই করার সময় আমার কী দেখা উচিত?
অনেক মাস্ক বড়দের জন্য বানানো এবং এগুলো সঠিকভাবে শিশুদের মুখে লাগে না। আপনি যদি মাস্ক কেনেন তবে এমন মাস্ক কিনুন যা আপনার শিশুর জন্য যথাযথ আকৃতি অনুসারে বানানো হয়েছে। আপনি আপনার শিশুদের জন্য মাস্ক কিনে আনেন বা নিজে বানিয়ে দেন, উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষ্য রাখুন যাতে মাস্ক শিশুর মুখ, নাক ও থুতনি ভালোভাবে ঢেকে রাখে এবং গালের পাশে কোনো ফাঁকা জায়গা না থাকে বা তাদের চোখ ঢেকে না যায়। শিশুরা মাস্ক পরে দ্রুততার সঙ্গে হাঁটা বা কথা বলার সময় যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে নিঃশ্বাস নিতে পারে তা নিশ্চিত করুন।
কাপড়ের মাস্ক কীভাবে পরিষ্কার করতে হয়
দিনে কমপক্ষে একবার সম্ভব হলে গরম পানি দিয়ে (কমপক্ষে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আঁচে) সাবান বা গুড়া সাবান ব্যবহার করে কাপড়ের মাস্ক ধুয়ে নিন। মেশিনে ধোয়ার ক্ষেত্রে, কাপড়ের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত উষ্ণতার সেটিং ব্যবহার করুন। হাতে ধোয়ার ক্ষেত্রে, গরম সাবান পানি ব্যবহার করুন। ধোয়ার পরে মাস্কটি পুনরায় পরার আগে ভালভাবে শুকানো উচিত। মাস্ক একটি পরিষ্কার ব্যাগে সংরক্ষণ করুন।
আপনার স্বাস্থ্য এবং আপনার আশেপাশে থাকা অন্য সবার সুরক্ষার জন্য মাস্ক সঠিকভাবে পরিধান করা, খোলা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পরিবারের সঙ্গে এই তালিকাটি অনুসরণ করার চর্চা করুন, যাতে এটি একটি নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয়।
পরামর্শ: আপনি এবং আপনার পরিবার যদি মাস্ক খুলে রাখার এবং দিনের বেলায় এগুলো পুনরায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেন, তবে এগুলো সংরক্ষণের জন্য মুখবন্ধ করা যায় এমন পরিষ্কার ব্যাগ ব্যবহার করুন। আপনার পরিবারের প্রতিটি মাস্কের জন্য আলাদা ব্যাগ ব্যবহার করুন। মাস্কটি ব্যাগে রাখার সময় বা ব্যাগ থেকে বের করার সময় সম্ভাব্য দূষণ এড়াতে ইলাস্টিক বন্ধনী বা গিটগুলোতে ধরুন (মাস্কের পৃষ্ঠ স্পর্শ না করে)। এটি পরিধানের আগে আপনার হাত ধোয়ার কথা মনে রাখবেন।
মেডিকেল মাস্কগুলো একবার ব্যবহার উপযোগী এবং ব্যবহারের পর এগুলো ঢাকনাযুক্ত ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দেয়া উচিত।
Adobe Stock/Veronika
বাম থেকে ডানে:
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস